দান কী ও উইল কী? দান কী ও উইল এর উপাদান ও তফাৎ কি কি?

0

১। হেবা বা দান

২। উইল। 

তবে অনেকেই ২টি (হেবা বা দান, উইল)মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন না

 ১। হেবা বা দান কিঃ

হেবা বা দান হচ্ছে কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে দামের বিনিময় ছাড়া সম্পত্তির তাৎক্ষণিক হস্তান্তর যা অপর ব্যক্তি বা তার পক্ষে কেউ গ্রহন করে
একজন সম্পত্তির মালিক তার ওয়ারিশ কিংবা অন্য কাউকে দানের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে আইনত ইহা বৈধ অনেকে দানকে হেবার সাথে মিলিয়ে পেলেন যেকোন ধর্মের লোকই তার সম্পত্তি দান করতে পারে কিন্তু হেবা শুধু মুসলমানদের জন্যে প্রযোজ্য

 হেবা জন্য শর্ত বা উপাদান সমুহ:

১. হেবাকারীকে হেবার ঘোষণা দিতে হবে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করে ঘোষণা দেয়া যাবে না (ধারা , পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা, ২০১৫)

২। যাকে হেবা বা দান করা হচ্ছে, তার দ্বারা গ্রহণ

৩। হেবা করা সম্পত্তির দখল গ্রহণ। হেবা কিংবা দান করা সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করা বাধ্যতামূলক এবং অবশ্যই রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। 

অর্থাৎ দান লিখিত আকারে হতে হবে তা রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হয়। তবে নাবালক সন্তান থাকলে দানের ক্ষেত্রে সন্তান সাবালক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে

 

            দান বা হেবা করতে হয় নিঃশর্তভাবে।

 উইল কিঃ

সাবালক নয় এমন প্রত্যেক সুস্থ মস্তিস্কের মুসলমানই উইল বা অছিয়তের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন আর উইল কার্যকর হয় উইলকারীর মৃত্যুর পর সম্পত্তির উইলের ক্ষেত্রে সম্পত্তির এক- তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যাবে না এবং ওয়ারিশদের অনুমতি নিতে হয় কোন মুসলমান তার দাফন-কাফনের ব্যয় এবং দেনা পরিশোধের পর সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা হলে এবং অন্য ওয়ারিশরা সম্মতি না দিলে এক-তৃতীয়াংশের অধিক সম্পত্তির উইল কার্যকর হবে না

 উইলদাতা:

যিনি উইল করেন তাকে উইল দাতা 

 উইল গ্রহীতা:

যার বরাবরে উইল করা হয় তাকে উইল গ্রহিতা বলা হয়ে থাকে। 

 উইল ও উইলকারীর শর্ত বা উপাদান সমুহ:

 ১। দাতার মৃত্যুর পর উইল কার্যকর হয়। 

২। যিনি সম্পত্তি উইল করেছেন তিনি জীবিতাবস্থায় একের অধিক উইল করে থাকলে যে উইলটি সর্বশেষ করা হয়েছে তা কার্যকর হবে

৩। উইলকারী জীবিতাবস্থায় তাঁর সম্পত্তি দান, বিক্রয়সহ সব ধরনের হস্তান্তরের ক্ষমতার অধিকারী। 

৪। কোনো মুসলমান তাঁর দাফন-কাফনের ব্যয় দেনা পরিশোধের পর সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করতে পারবে না। অর্থাৎ ক্ষেত্রে পুরো সম্পত্তি দিয়ে যেতে পারবেন না। 

৫। যদি এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা হয়, তাহলে সে উইল কার্যকর করা যাবে না। কারণ উইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোউত্তরাধিকারী যেন বঞ্চিত না হয়। উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে কোন উইল করা যাবেনা

 ইসলামী মতবাদঃ

প্রশ্নঃ

সায়াদ ইবনে আক্কাস বলেন যে

শেষ হজ্জের বছরে রাসুলুল্লাহ (সা) আমাকে অনেক বার মক্কাতে দেখতে এসেছেন। আমি খুব অসুস্থ ছিলাম, সেই কারণে তিনি এসেছিলেন। আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বললাম, আমার ১টি কন্যা সন্তান আছে, আর কেউ নেই। আমার সম্পত্তি প্রচুর। আমার কেউ নেই। আমার অসুখও বেড়ে যাচ্ছে। আমি কি আমার সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ দাতব্য কাজের জন্য উইল করে যাব?

 জবাব:

রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, না। আমি বললাম, অর্ধেক? রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, না। তারপর বললেন, তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে যাও। যতটুকুই দাও না কেন তার জন্য আল্লাহ তোমাকে পুরস্কার দিবেন। আর তোমার ওয়ারিশদের ভিখারী করে রেখে যেও না, সেটা ভালো নয়। (মিশকাত)

কাজেই উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি পরিস্কার যে ইসলামী আইনের বিধান মোতাবেক এক তৃতীয়াংশের বেশী উইল করা যায় না। 

তবে অন্য ওয়ারিশদের অনুমতি নিয়ে এর বেশিও উইল করা যাবে। 

 উইল সম্পর্কে হিন্দু আইনঃ

একজন হিন্দু ব্যক্তিও তাঁর সম্পত্তি উইল করতে পারেন। ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। একজন হিন্দু ব্যক্তি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি উইল করতে পারেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জেলা জজ আদালত থেকে উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল প্রবেট করতে হয়। 

 প্রবেট কিঃ

 প্রবেট হচ্ছে আদালতের মাধ্যমে উইলের প্রমাণ। কোনো ব্যক্তি উইলমূলে কোনো সম্পত্তি পেলে দাতার মৃত্যুর পর আপনা-আপনি কার্যকর হয় না। যার অনুকূলে উইল সম্পাদন করা হয়েছে তিনি ওই উইল দাখিল করে আদালতে দরখাস্ত দ্বারা স্বতসিদ্ধ (প্রবেট) করে নেবেন

 উইলজারী করতে করণীয়ঃ

ক) উইলমূলে স্বতসিদ্ধ করার বা প্রবেটের দরখাস্ত দাখিল করে প্রবেট বিজ্ঞাপনী (Notice) যথাযথ নিয়মে জারি করাতে হয়।

খ) দরখাস্ত প্রতিজ্ঞাপত্র (Affidavit) সম্পাদন করে আদালতে দাখিল করতে হয়।

গ) উইলকারী একের অধিক ব্যক্তির অনুকূলে সম্পত্তি উইল করে থাকলে প্রবেট নেওয়ার সময় যার ওপর সম্পত্তি পরিচালনার ভার অর্পিত হবে তিনি পরিচালক (Administrator) নিযুক্ত হবেন।

ঘ) প্রকৃত উইল নিবন্ধনের (Registration) পর প্রবেটসহ আদালত থেকে দরখাস্তকারী পাবে।

ঙ) আদালত থেকে উইলের নকল নেওয়ার প্রয়োজন হলে স্বার্থবান ব্যক্তিকে প্রথমে প্রতিজ্ঞাপত্র (Affidavit) যুক্ত দরখাস্ত দ্বারা আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করতে হবে।

চ)  অনুমতি পেলে অতঃপর আদালতে নকলের জন্য দরখাস্ত করবেন।

ছ) উইলের প্রবেট (উইল বলে স্বতসিদ্ধির আদেশনামা) নিতে আদালত মাশুল (কোর্ট ফি) দিতে হবে।

জ) এই কোর্ট ফি সম্পত্তির মূল্যানুপাতে (Ad valorem) নির্ধারিত নিয়মে প্রদান করতে হবে

 দান ও উইলের মধ্যে তফাৎ:

উইলের সাথে হেবার তফাৎ এই যে, যেক্ষেত্রে উইলের দাতা তার সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইলে প্রদান করতে পারে না হেবার দাতা তার সমস্ত সম্পত্তি দান করতে পারে, এমনকি মাত্র একজন উত্তরাধিকারকেই সমস্ত সম্পত্তি হেবা করে দিতে পারে উইল একবার করার পর ইচ্ছা করলে বাতিল করা যায় দানের ক্ষেত্রে একবার দানের সম্পত্তির হস্তান্তর করলে তা আর বাতিল করা যায় না গর্ভে থাকা কোনো সন্তানের বরাবর উইল করা যায়, যদি উইল করার ছয় মাসের মধ্যে তার জন্ম হয়

মুসলিম আইনে বলা আছে, কোন উইল লিখিত হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। উইল মৌখিকও হতে পারে। মৌখিক উইল প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য। মৃত উইলকারী ব্যক্তি কি বলেছিলেন, সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী বা অবস্থা সম্পর্কে সন্তুষ্ট হওয়া ছাড়াও আদালতকে নিশ্চিত হতে হবে সকল ঘটনা, অবস্থা বা প্রদত্ত নির্দেশ দ্বারা মৃত ব্যক্তি উইলের মনোভাবই প্রকাশ করেছিলেন। তবে উত্তরাধিকার আইনে বলা আছে, উইল লিখিত দলিল দ্বারা হতে হবে। দুজন বা তার অধিক ব্যক্তি উইলে সাক্ষর করবেন। এতে রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজন নেই। তবে কেউ ইচ্ছা করলে রেজিস্ট্রি করিয়ে নিতে পারেন। উইলের ক্ষেত্রেও নামজারি করা যায়

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top