সাধারণভাবে দলিল বাতিল বলতে কোন দলিলকে
অকার্যকর এবং অবৈধ্য বলে ঘোষনা করা। ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ থেকে ৪১ ধারায় দলিল বাতিলের জন্য আদালতে মামলা
দায়ের করিতে হইবে। এবং
১৮৭৭ সালের
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩১ থেকে ৩৪ ধারায় দলিল সংশোধনের বিধানাবলী আলোচনা করা হইয়াছে।
১৮৭৭ সালের
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় দলিল সংশোধনের বিধানাবলী আলোচনা করা হইয়াছে।
বাতিল বা
বাতিলযোগ্য দলিলের কারনে কোন ব্যক্তি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহাই হল সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারার মুল উদ্দেশ্য।
দলিল
বাতিলঃ
মনে করুন, আপনার একটি দলিল বা আইনি ডকুমেন্ট ছিল, যা অন্যের হস্তগত হয়েছে, কিংবা সেটির এমন পর্যায়েরয়েছে, যার কার্যকরিতা বহাল থাকলে আপনার জন্য সমস্যার তৈরি হতে পারে। দলিল বাতিল করার এরকম কোনো প্রয়োজন পড়লে, আদালতের শরণাপন্ন হয়ে কাজটি করা যায়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় বলা হয়েছে যে,
যে
কোনো ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে লিখিত চুক্তি অবৈধ বা বাতিলযোগ্য, যার যুক্তিসঙ্গত আশঙ্কা রয়েছে যে, তেমন দলিল যদি অনিষ্পন্ন অবস্থায় ছেড়ে দিলে, তাহা উক্ত ব্যক্তির গুরুতর ক্ষতির কারণ হবে। উক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি দলিল বাতিল বা দলিল বাতিলযোগ্য ঘোষনার
মামলা করতে পারে।
“১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা আদালতের ইচ্ছাধীন বা বিবেচনামুলক ক্ষমতা।”
“১৮৭৭ সালের
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা মতে
আদালত তাহার ইচ্ছাধীন বা বিবেচনামুলক ক্ষমতা
বলে রায় প্রদান করিতে পারে এবং চুক্তি বিলুপ্তি হিসেবে দলিল ত্যাগের আদেশ প্রদান
করিতে পারে। ।”
উদাহরণঃ
ক তাহার ১
একর জমি খ এর কাছে ০২/০২/২০১০ইং তারিখে বিক্রয় করেন এবং উক্ত জমি হস্তান্তর করেন।
তার পর ক পুনরায় উক্ত জমি গ নামক ব্যক্তির কাছে প্রতারণামুলক ভাবে ০২/০২/২০০৯ইং
তারিখে বিক্রয়ের জাল দলিল সৃষ্টি করেন। উক্ত ক্ষেত্রে খ গ এর জাল দলিল বিলুপ্তি
লাভ করবেন।
কি কি কারন বা
উপাদান বা শর্ত দলিল বাতিল হয়ঃ
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা
অনুযায়ী দলিল বাতিলের কারন সমুহ যথাঃ
১. কোন
লিখিত দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য হলে।
২. যদি
বাদীর যুক্তিসংগত আশঙ্কা থাকে যে, এরুপ দলিল যদি অনিস্পন্ন থেকে যায় তাহলে বাদীর
অপুরনীয় ক্ষতির কারন সৃষ্টি হইতে পারে।
৩. উক্ত
ক্ষতির কারণ গুরুত্বর হবে।
৪. আদালত
তাহার ইচ্ছাধীন বা বিবেচনামুলক ক্ষমতা বলে রায় প্রদান করিতে পারে এবং চুক্তি
বিলুপ্তি হিসেবে দলিল ত্যাগের আদেশ প্রদান করিতে পারে।
৫. দলিলটি
জাল বা প্রতারণামুলকভাবে সৃষ্টি হতে হইবে।
৬. আংশিক
দলিল বাতিলের বেলায় বাতিলকৃত অংশ অনান্য অংশ হতে সম্পুর্ণ আলাদা হতে হবে।
৭. উক্ত
বিষয় অবগত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করিতে হইবে। তামাদি আইন, ১৯০৮-এর ৯১ অনুচ্ছেদ
৮. দলিল
বাতিলের মামলায় বাদীকে পরিস্কার হাতে আসতে হবে।
কে এরুপ দলিল বাতিলের প্রতিকার পেতে
পারেন/মামলা করতে পারেনঃ
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা
অনুযায়ী যে সকল ব্যক্তি দলিল বাতিলের প্রতিকার পেতে পারে তাহা আলোচনা করা হল যথাঃ
1)
দলিলের পক্ষ
2)
যে কোন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে দলিলটি বাতিল বা বাতিলযোগ্য
3)
যে কোন ব্যক্তি উক্ত বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিলের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত
হতে পারে।
নালিশী দলিলে দলিল রদ বা বাতিলের জন্য মামলা করেন, সেক্ষেত্রে কোর্ট ফি অ্যাক্টের বিধান মতে ‘এডভোলেরম কোর্ট ফি’ প্রদান করে মামলা দায়ের করতে হবে।
প্রমানের দ্বায়িত্বঃ বাদী বা ফরিয়াদির।
দলির
বাতিলের মামলায় আদালত কি প্রতিকার প্রদান করিবেনঃ
“১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা আদালতের ইচ্ছাধীন
বা বিবেচনামুলক
ক্ষমতা।”
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধরা অনুযায়ী দলিল বাতিলের মামলায় আদালত ২ ধরনের প্রতিকার
প্রদান করিবেন যথাঃ
ক. দলিলটি বাতিল বা বাতিলযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
খ. দলিলটি অর্পণের আদেশ প্রদান ও নাকোচ করা।
রেজিস্ট্রেশন আইন বা
দলিল নিবন্ধন আইন অনুসারে,
দলিল নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রিকৃত হয়ে থাকলে, আদালত তাহার ডিক্রির একটি কপি সেই সংশ্লিষ্ট অফিসার বা কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করবেন, যার অফিসে উক্ত দলিল নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল। উক্ত দলিল নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রিকৃত কর্মকর্তা বা অফিসার উক্ত নিবন্ধনকৃত দলিল নিবন্ধন বহিতে আদালতের আদেশ মোতাবেক দলিল বিলুপ্তির বিষয় লিপিবদ্ধ করবেন।
বিরোধীয় দলিলে পক্ষ আছেন এমন ব্যক্তি বা বাদী শুধু
মাত্র জাল দলিল ও তার উপর বার্ধ্যকর নয় মর্মে ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২
ধারা অনুযায়ী ঘোষনামুলক ডিক্রি প্রাথনা করে মামলা দায়ের করিতে পারিবেন না।
তাকে ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ও
৪২ ধারা অনুযায়ী দলিল বাতিল ও ঘোষনামুলক ডিক্রি প্রাথনা করে মামলা দায়ের করিতে
হবে।
নালিশী দলিলে দলিল রদ বা বাতিলের জন্য মামলা করেন, সেক্ষেত্রে কোর্ট ফি অ্যাক্টের বিধান মতে ‘এডভোলেরম কোর্ট ফি’ প্রদান করে মামলা দায়ের করতে হবে।
বাদী যদি দলিলের পক্ষ না হন সেক্ষেত্রে ১৮৭৭ সালের
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী ঘোষনামুলক ডিক্রি প্রাথনা করে
মামলা দায়ের করিতে পারিবেন।
যদি নালিশী দলিলে কোন পক্ষ না থাকেন এবং উক্ত দলিল তার উপর বাধ্যকর নয় মর্মে বিজ্ঞাপনী ডিক্রির প্রার্থনা করেন, সেক্ষেত্রে নির্ধারিত কোর্ট ফি প্রদানে মামলা করা যাবে।