লেখক: Maruf Hossen Jewel
দন্ডবিধি-১৮৬০ এর আঘাত(Hurt) এবং গুরুতর আঘাত(Grievous Hurt) সম্পর্কিত কয়েকটি ধারার তুলনামূলক আলোচনা করে সে ধারাগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে চাই।দন্ডবিধি-১৮৬০ এর চারটি ধারা-৩২৩,৩২৪,৩২৫,৩২৬ সম্পর্কে আলোচনা করে বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার হব।
দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ধারা-৩২৩ -এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দানের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।এখানে বলা আছে যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করে তার শাস্তি হবে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ড।
নোটঃ ভোতা অস্ত্র দ্বারা যদি কেউ স্বেচ্ছাকৃতভাবে কাউকে আঘাত করে তাহলে তার বিরুদ্ধে দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩২৩ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে।আর ভোতা অস্ত্র দ্বারা যদি কেউ স্বেচ্ছাকৃতভাবে কাউকে মারাত্মক আঘাত (Grievous Hurt) করে তাহলে তার বিরুদ্ধে দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩২৫ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে।তার মানে ভোতা অস্ত্র দ্বারা আঘাত করলে আসামী দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩২৩ ধারার আওতায় পরবে। আর ভোতা অস্ত্র দ্বারা মারাত্মক আঘাত (Grievous Hurt) করলে আসামী দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩২৫ ধারার আওতায় পরবে।কখন আঘাত(Hurt) মারাত্মক আঘাতে (Grievous Hurt) রূপান্তরিত হবে সেটা ধারা-৩২০ এ বলা আছে।ধারা-৩২০ এ বলা হয়েছে আটটি ক্ষেত্রে আঘাত(Hurt),গুরুতর আঘাত(Grievous Hurt) হিসেবে বিবেচিত হবে।যেমন-কাউকে আঘাত করে যদি পুরুষত্বহীনকরণ করা হয়,কাউকে আঘাত করে তার দুই চোখের একটি চোখও যদি স্হায়ীভাবে রহিত করে ফেলা হয়,দুই কানের একটি কানের শ্রবণশক্তিও যদি স্থায়ীভাবে রহিত করা হয়,যে আঘাত আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ২০ দিনের জন্য তীব্র দৈহিক যন্ত্রনা দেয়,যে আঘাত আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তার সাধারণ পেশা অনুসরণ করতে অসমর্থ করে ইত্যাদি।
দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩২৫ ধারাতে স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত প্রদানের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।এখানে বলা আছে কোন ব্যক্তি কাউকে স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত প্রদান করলে তার শাস্তি হবে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড।
দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩২৪ ধারাতে ধারালো অস্ত্র দ্বারা স্বেচ্ছাকৃতভাবে কাউকে আঘাতের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।কেউ যদি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কাউকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে তাহলে ৩২৪ধারা অনুযায়ী তার শাস্তি হবে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ড।
দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩২৬ ধারাতে ধারালো অস্ত্র দ্বারা স্বেচ্ছাকৃতভাবে কাউকে গুরুতর আঘাতের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।এই ধারানুযায়ী স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত দানকারী ব্যক্তির শাস্তি হবে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড।
নোটঃধারালো অস্ত্র দ্বারা কাউকে স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করলে,তার বিরুদ্ধে ৩২৪ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে।আর ধারালো অস্ত্র দ্বারা কাউকে স্বেচ্ছাকৃতভাবে মারাত্মক আঘাত করলে,তার বিরুদ্ধে ৩২৬ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে।
এখন আমরা চারটি ধারার তুলনামূলক আলোচনা করব।ধারা-৩২৩ এ ভোতা অস্ত্র দিয়ে আঘাতের কথা বলা হয়েছে।আর ধারা-৩২৫ এ ভোতা অস্ত্র দিয়ে মারাত্মক আঘাতের কথা বলা হয়েছে।তার মানে ৩২৩ এর অপরাধ ৩২৫ এ রূপান্তরিত হতে পারবে।আঘাত যখন গুরুতর আঘাত হয়ে যাবে,তখনই অপরাধটি ৩২৩ থেকে ৩২৫ এ চলে যাবে।
দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ধারা-৩২৪ এ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের কথা বলা হয়েছে।আর ৩২৬ এ ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারাত্মক আঘাতের কথা বলা হয়েছে।তার মানে ধারা-৩২৪ এর অপরাধ, ধারা-৩২৬ এ রূপান্তরিত হতে পারবে।আঘাত যখন গুরুতর আঘাত হয়ে যাবে,তখনই অপরাধটি ৩২৪ থেকে ৩২৬ হয়ে যাবে।
উদাহরণঃ
শিশির নামে এক ব্যক্তি কামরুল নামে এক ব্যক্তিকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে তার এক পা ভেঙ্গে ফেলে।আবার আবির নামে এক ব্যক্তি ধারালো ছুরি দিয়ে সাইফুল নামের এক ব্যক্তির একটি পায়ের কিছুটা মাংস তুলে ফেলে।এখন আপনাদের কাছে কি মনে হয়?কোনটা বেশি বড় অপরাধ? হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে একেবারে একটা পা ভেঙ্গে গুড়াগুড়া করে দেয়া নাকি ছুরি দিয়ে একটি পায়ের কিছু মাংস তুলে ফেলা?নিশ্চয়ই উত্তর হবে পা ভেঙ্গে ফেলা।হকিস্টিক যেহেতু ভোতা অস্ত্র তাই হকিস্টিক দিয়ে মারাত্মক আঘাত করার কারনে আঘাতকারীর বিরুদ্ধে ৩২৫ ধারানুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে।আর ছুরি ধারালো অস্ত্র হওয়ার কারনে আঘাতকারীর বিরুদ্ধে ৩২৬ ধারাধারানুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে।ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না?৩২৫ ধারানুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদ ৭ বছর আর ৩২৬ ধারানুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদ ১০ বছর।আবার ৩২৫ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য অপরাধ। তার মানে আসামী ৩২৫ ধারায় অপরাধ করলে অধিকার হিসেবে আদালতে জামিন চাইতে পারবে।৩২৫ ধারায় শুধুমাত্র ভোতা অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আঘাত করার কারনে, অনেক বড় অপরাধ করেও আসামী জামিন নিয়ে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।আর ৩২৬ ধারার অপরাধ হল অজামিনযোগ্য অপরাধ। এখানে আসামী অধিকারবলে আদালতের কাছে জামিন চাইতে পারে না।
আমরা উপরে আলোচনা করেছি দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩২৫ ধারায় আসামী কোন অপরাধ করলে আসামী অধিকার হিসেবে আদালতে জামিন চাইতে পারবেন।যেহেতু ৩২৫ ধারার আওতায় অপরাধ একটি জামিনযোগ্য অপরাধ। তাই অপরাধীরা ৩২৫ ধারার আওতায় অনেক বড় বড় অপরাধ করেও জামিন নিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়।অবশ্য আসামী যেন জামিন নিয়ে ছাড়া পেতে না পারে তার একটা উপায় আছে।আসামীর বিরুদ্ধে ৩২৫ ধারায় মামলা করার সময় ৩০৭ ধারাও যোগ করে দিতে হবে।তাহলে আসামী আর অধিকার হিসেবে জামিন চাইতে পারবে না।কারণ তখন অপরাধটি অজামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩০৭ ধারাতে খুনের উদ্যোগ(Attempt to Murder) এর শাস্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।এখানে বলা আছে খুনের উদ্যোগ নিয়ে কাউকে আঘাত করলে শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড।
আরো পড়ুন:
নোট: ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না
আমার সাইটঃ MHJ & Associates
নোট: আমাদের ফেসবুক Lawyer's Club Rajshahi পেজ এ লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।