ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামীর বিবৃতি বা স্বীকারােক্তির বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। দোষ স্বীকারােক্তি মূলত অভিযুক্ত হওয়ার পর আসামী কর্তৃক স্বেচ্ছায় অপরাধ স্বীকার করাকে বুঝায়।
স্বীকারােক্তি রেকর্ড করার ক্ষমতা:
মামলার তদন্ত পর্যায়ে বা বিচার শুরুর পূর্বে যে কোন সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে কোন বিবৃতি দিতে চাইলে তা রেকর্ড করতে পারেন-
(১) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
(২) প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট।
(৩) সরকার কর্তৃক বিশেষ ভাবে ক্ষমতা প্রাপ্ত দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট (কাঃবিঃ ১৬৪(১), পিআরবি ২৮৩(খ)(১) প্রবিধান)।
স্বীকারােক্তির শ্রেণী বিভাগ:
আসামীর স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি বা বিবৃতিতে অনেক সময় অপরাধের সাথে তার নিজের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য থাকে না। আবার কখনাে অন্যের জড়িত থাকার তথ্য থাকে, অর্থাৎ স্বীকারােক্তি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে সে বিবেচনায় স্বীকারােক্তিকে নিম্নরূপ ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা যায়-
১. দায়হীন জুডিশিয়াল কনফেশন:
এরূপ বিবৃতিতে অপরাধ সংঘটনের বর্ণনা থাকে কিন্তু বিবৃতি দাতা নিজে অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িত মর্মে স্বীকার করে না।
এরূপ বিবৃতি কার্যবিধি ১৬৪ ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় তাই এরূপ বিবৃতির সাক্ষ্যগত তেমন মূল্য নেই, ইহা দোষ স্বীকার নয় বরং দোষ খলন মাত্র (২৫ ডিএলআর ৪১, সাক্ষ্য আইন ২৪ ধারা)।
২. এক্সট্রা জুডিশিয়াল কনফেশন:
ম্যাজিস্ট্রেট ব্যতীত অপর কারাে নিকট দোষ স্বীকার করে প্রদত্ত বিবৃতি হলাে এক্সটা জুডিশিয়াল কনফেশন, এরূপ বিবৃতির সাক্ষ্যগত তেমন কোন মূল্য নেই। তবে এরূপ স্বীকাররােক্তির ভিত্তিতে পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন তথ্য উদ্ঘাটিত হলে তার সাক্ষ্যগত মূল্য আছে (৯ ডিএলআর ১১, সাক্ষ্য আইন-১৮৭২ এর ২৫ ও ২৬ ধারা)।
৩. জুডিশিয়াল কনফেশন:
অভিযুক্ত ব্যক্তি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অপরাধের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্ট থাকার কথা স্বীকার করে। স্বেচ্ছায় যে বিবৃতি বা স্বীকারােক্তি প্রদান করে তাই হলাে জুডিশিয়াল কনফেশন।
এরূপ স্বীকারোক্তি ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা এবং পিআরবি ২৮৩ প্রবিধানের সঙ্গে স্যপূর্ণ এবং এর সাক্ষ্যগত মূল্য অনস্বীকার্য। শুধু মাত্র এরূপ বিবৃতির উপর ভিত্তি করে এ মামলায় আসামীর শাস্তি হতে পারে (সাক্ষ্য আইন ২৪ ধারা)।
স্বীকারােক্তি যখন গ্রহণযােগ্য নয়:
আসামীকে প্রলােভন দেখিয়ে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে কোন স্বীকারােক্তি আদায় করা হলে তা আদালতে গ্রহণীয় হবে না, দোষ-স্বীকারােক্তি হতে হবে স্বেচ্ছাপ্রণােদিত (৯ ডিএলআর ৩৩৬, সাঃ আইন ২৪ ধারা)।
স্বীকারােক্তি যেখানে রেকর্ড করা যাবেঃ-
দোষ স্বীকারােক্তি রেকর্ড করতে হবে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় বা আদালত ভবনের কোন কক্ষে। ছুটির দিনে বিবৃতি রেকর্ড করতে হলে তাও করতে হবে উপরােক্ত স্থানে। বাস ভবন বা অন্যত্র বসে স্বীকারােক্তি রেকর্ড করা যাবে না।
যখন স্বীকারােক্তি রেকর্ড করা যাবেঃ-
হাইকোর্ট ’স জেনারেল রুলস্ এন্ড সার্কুলার, অডার্স (ক্রমিনাল) এর ২৪(১) নং অর্ডারের বিধান হলাে আদালতের সকল কার্যক্রম চলবে আদালত কালের মধ্যে অর্থাৎ বিকেল ৪.৩০ মিনিট এর মধ্যে ।
সেমতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই স্বীকারােক্তি রেকর্ড করতে হবে। পিআরবি ২৮৩(খ) (২) প্রবিধানেও বলা হয়েছে আদালত চলাকালে স্বীকারােক্তি রেকর্ড করতে হবে।