কিভাবে কোন দলিল বাতিল করা যায়, দলিল বাতিলের শর্তসমূহ, কে আবেদন করতে পারবে, দলিল বাতিল মামলার কোর্ট ফি, তামাদি মেয়াদ!

0

লিল বাতিল এর বিষয়টি আলোচনার পূর্বে দলিল সম্পর্কে জেনে নেয়া দরকার। যে কোন চুক্তির লিখিত ও আইনগ্রাহ্য রূপ হচ্ছে দলিল। সাধারণত বাংলা ভাষায় সম্পত্তি, বিশেষ করে জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয়, বণ্টন এবং হস্তান্তরের জন্য ‘দলিল’ শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।


দলিল বাতিল বলতে কি বুঝায় : 

যখন কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো লিখিত দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য হয় এবং একই সাথে সেই ব্যক্তির যদি যুক্তিসঙ্গত আশংকা থাকে যে, যদি এরুপ দলিল বলবৎ অবস্থায় রাখা হয়, তাহলে তার গুরুতর ক্ষতির কারণ হবে, তখন সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন কোর্টে দলিলটি বাতিল বা বাতিলের মামলা করতে পারে। এধরণের মামলাকেই দলিল বাতিলের মামলা বলে।

দলিল বাতিলের মামলার শর্তসমূহ :

ক) কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি লিখিত দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য হতে হবে।;

খ) দলিলদাতার নিকট দলিলটির অস্তিত্ব ক্ষতির কারণ হবে বলে যুক্তিসঙ্গত আশংকা থাকতে হবে।

গ) দলিলের অস্তিত্ব দলিলদাতার গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে হবে;

ঘ) তামাদি আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মামলা দায়ের করতে হবে;

ঙ) কোর্ট ফি আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোর্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে মামলা দায়ের করতে হবে।

কতিপয় বাতিলযোগ্য দলিলসমূহ :

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন১৮৭৭ এর ৩৯ ধারার শর্তসমূহ সাপেক্ষে যে কোনো দলিলই বাতিল ঘোষিত হতে পারে নিম্নে কয়েকটি বাতিলযোগ্য দলিলের উল্লেখ করা হলো

১. বিক্রয় দলিল বা সাফ কবলা দলিল;

২. দানপত্র দলিল বা হেবা দলিল;

৩. রেহেনী বা বন্ধকী দলিল;

৪. ইচ্ছাপত্র বা উইল দলিল;

৫. ইজারা বা লিজ দলিল ইত্যাদি।

যারা দলিল বাতিলের মামলা করতে পারে :

বাতিল বা বাতিলযোগ্য দলিলের যে কোনো পক্ষ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা অনুসারে দলিল বাতিলের মামলা দায়ের করতে পারে;

দলিলের পক্ষগণ ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে দলিলটি বাতিল বা বাতিলযোগ্য তারাও মামলা দায়ের করতে পারে

নাবালক দলিল বাতিলের মামলা করতে পারেনাবালক সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা অনুসারে দলিলটি বাতিলের মামলা করতে পারে নাবালক অবস্থায় কোনো দলিল সম্পাদিত হলে এবং উক্ত দলিল তার বিরুদ্ধে বাতিল বা বাতিলযোগ্য হলে  উক্ত দলিলের অস্তিত্ব নাবালকের গুরুতর ক্ষতির কারণ হলে উল্লেখিত ধারায় মামলা করা যায়

কোর্ট ফির পরিমাণ :

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা অনুসারে শুধুমাত্র কোন দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য ঘোষণার মামলায়, কোর্ট ফি আইন, ১৮৭০ এর দ্বিতীয় তফসিলের ১২(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্দিষ্ট কোর্ট ফি ৩০০(তিনশত) টাকা প্রদান করতে হবে। 

তবে দলিল বাতিল ঘোষণার সাথে যদি দলিল অর্পণ এবং দলিল বাতিলের আবেদন করা হয় সেক্ষেত্রে প্রথম অংশের জন্য কোর্ট ফি আইনের ৭(৪)(গ) ধারা অনুসারে যে পরিমাণ মূল্যের উপর বাদী প্রতিকার চায় তা ব্যক্ত করে তার উপর কোর্ট ফি আইনের প্রথম তফসিল (বি) এ প্রদত্ত টেবিল অনুযায়ী ২% হারে ফি দিতে হবে।

দলিল বাতিলের মামলার তামাদি মেয়াদ :

তামাদি আইনের ৯১ ধারা অনুযায়ী, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় দলিল বাতিলের মামলা করার অধিকারী, এই বিষয়টি অবগত হওয়ার ০৩ (তিন) বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে তামাদি আইনের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুসারে ০৬ (ছয়) বছরের মধ্যেও মামলা দায়ের করা যেতে পারে।

দলিল বাতিলের মামলায় প্রমাণের দায়িত্ব (Burden of Proof):

দলিল বাতিলের মামলায় যে ব্যক্তি দাবি করে যে, দলিলটি তার বিরুদ্ধে বাতিল বা বাতিলযোগ্য এবং দলিলটির এরুপ অস্তিত্ব উক্ত ব্যক্তির গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপরই উক্ত অভিযোগটি প্রমাণের দায়িত্ব বর্তাবে।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের প্রয়োগ :

দলিল আংশিক বাতিল  আংশিক বহাল রাখা যায় কিনা : হরতাল রায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top