কোনো বিশেষ আইনের
অধীন দায়েরকৃত মোকদ্দমার
ক্ষেত্রে, যেখানে বিশেষ
তামাদির বিধান রয়েছে,
সেক্ষেত্রে তামাদি আইনের
৫ ধারা প্রযোজ্য
নয়। অর্থাৎ বিশেষ
আইনে উল্লেখিত তামাদির
মেয়াদের মধ্যে কোনো
আবেদন দায়ের না
করতে পারলে, উক্ত
মেয়াদ বাড়ানোর জন্য
তামাদি আইনের ৫
ধারায় দরখাস্ত দায়ের
করলে তা আদালত
প্রত্যাখ্যান করবে।
নিম্নলিখিত কারণে বিশেষ আইনের তামাদির মেয়াদের ক্ষেত্রে তামাদি আইনের ৫ ধারার বিধান প্রযোজ্য নয়ঃ-
বিশেষ আইনের প্রাধান্যঃ
আইনে একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো সাধারণ আইনের উপর বিশেষ আইন প্রাধান্য পাবে। বিশেষ আইনে কোনো বিধান থাকলে তা উপেক্ষা করে সাধারণ আইন প্রয়োগ করা যাবে না। যেহেতু ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪’ একটি বিশেষ আইন তাই এই আইনের তামাদির মেয়াদের ক্ষেত্রে তামাদি আইনের ৫ ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে না।
যেমন, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪’ এর ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আদেশ, রায় বা শাস্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে এমন আদেশ জারীর তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন দায়ের করা যাবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি উক্ত ৩০ দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে না পারে। তাহলে তিনি যথেষ্ট কারণ দেখিয়ে তামাদি আইনের ৫ ধারায় তামাদির মেয়াদ বাড়ানো বা তামাদি মওকুফের আবেদন করলে আদালত তা প্রত্যাখ্যান করবে।
কারণ বিশেষ আইনের ক্ষেত্রে তামাদি আইনের ৫ ধারা প্রযোজ্য হবে না।
এই সম্পর্কে উচ্চ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ‘মোস্তফা বনাম রাষ্ট্র’ এই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এই মামলায় তামাদিতে বারিত দুইটি আপিল
‘বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪’ এর ৩০ ধারায় হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছিল। আপিলকারীরা তামাদি আইনের ৫ ধারায় তামাদি মওকুফের জন্য উক্ত আপিলের সাথে দরখাস্ত দিয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট তামাদি মওকুফের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে এবং তামাদিতে বারিত আপিলটি খারিজ করে দেন।
‘বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪’ একটি বিশেষ আইন এবং এই আইনের কোনো আপিল দায়েরের সময় নির্ধারণ করে দেওয়ায় তামাদি আইনের উল্লেখিত তামাদির বিধান ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪‘ এর অধীন গঠিত কোনো ট্রাইব্যুনালের আদেশ, রায় বা শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের জন্য নির্ধারিত সময়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই আইনের ৩০ ধারা নিজেই আপিল দায়েরের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজেই কোনো বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আদেশ, রায় বা শাস্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের জন্য কোনো আইন স্বয়ং যে বিশেষ তামাদির মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা উপেক্ষা করে সাধারণ আইন, তামাদি আইনের ৫ ধারায় বিলম্ব মওকুফের আবেদন মঞ্জুর করে, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর ৩০ ধারায় তামাদিতে বারিত কোনো আপিল মঞ্জুর করার কোনো সুযোগ নাই।
তামাদি আইনের ২৯(২) ধারাঃ –
তামাদি আইনের ২৯(২) ধারা অনুযায়ী তামাদি আইনের ৫ ধারা বিশেষ আইনে উল্লেখিত তামাদির জন্য প্রযোজ্য নয়। এই ২৯(২) ধারা অনুযায়ী কোনো বিশেষ আইনে কোনো মামলা, আপিল বা দরখাস্তের জন্য এই আইনের ধারা ৩, ৪, ৯ থেকে ২২ ধারার বিধানসমূহ সেই পরিমান প্রযোজ্য হবে, যে পরিমাণ তা উক্ত বিশেষ আইনের স্পষ্ট বহির্ভূত নয়।
সুতরাং তামাদি আইনের ২৯(২) ধারা এবং মোস্তফা বনাম রাষ্ট্র, মামলার আলোকে বলা যায় যে, বিশেষ আইনে উল্লেখিত তামাদির ক্ষেত্রে তামাদি আইনের ৫ ধারার বিধান প্রযোজ্য নয়। বিশেষ আইনের তামাদির মেয়াদ মওকুফের জন্য আদালত তামাদি আইনের ৫ ধারায় দায়রকৃত বিলম্ব মওকুফের আবেদন মঞ্জুর করতে পারে না।
তামাদি আইন বিষয়ে আরও পড়তে ক্লিক করুন –