দান কী এবং উইল কী?

0
লেখক: Maruf Hossen Jewel
মা-বাবা জীবদ্দশায় নিজেদের নামে থাকা জমিজমা ভবিষ্যতে সন্তানেরা যেন পায়, তা নিশ্চিত করে যেতে চান। এ নিয়ে উদ্বিগ্নও থাকতে দেখা যায় অনেককে। বিশেষ করে যাঁদের শুধু কন্যা সন্তান আছে, তাঁদের দুশ্চিন্তাই যেন বেশি। অনেক মা-বাবা বলেই বসেন, ছেলেমেয়ের নামে সম্পত্তি লিখে দিয়ে যাবেন। যেন তাদের মৃত্যুর পর পুরো সম্পত্তি সন্তানেরা নিশ্চিন্তভাবে ভোগ করতে পারে। এ নিয়ে কেউ কেউ বিভ্রান্তও হন। রীতিমতো স্ট্যাম্পে ঘোষণা দিয়ে নোটারি করিয়ে রাখেন কেউ কেউ। 
কিন্তু ছেলেমেয়েদের সম্পত্তির নিশ্চয়তা করতে গিয়ে আইন সঠিকভাবে না জানার কারণে ভবিষ্যৎ আরও জটিল করে তোলা হয়। সম্পত্তি যদি নিশ্চিত করে দিতে হয়, তাহলে আইনের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এগুলো জানতে হবে এবং মানতে হবে।


দান কী এবং উইল সম্পর্কে আইন কী বলে?

কেউ যদি তাঁর সন্তানদের সম্পত্তি নিশ্চিত করতে চান, তাহলে সাবালক সন্তানদের কাছে প্রথমেই বিক্রয় করে হেবা দলিল সম্পন্ন করে নিতে পারেন। 

মুসলমানদের ক্ষেত্রে বিক্রয় বাদে আরও ২টি পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। 
১। হেবা বা দান এবং 
২। উইল। 
তবে অনেকেই এ দুটির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন না।

দান বা হেবা করতে হয় নিঃশর্তভাবে। হেবা করার জন্য ৩টি শর্ত পূরণ করতে হয় যেমন:

১। হেবাকারীকে হেবার ঘোষণা দিতে হবে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করে ঘোষণা দেয়া যাবে না (ধারা ৪, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা, ২০১৫)।
২। যাকে হেবা বা দান করা হচ্ছে, তার দ্বারা গ্রহণ।
৩। হেবা করা সম্পত্তির দখল গ্রহণ। হেবা কিংবা দান করা সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করা বাধ্যতামূলক এবং অবশ্যই রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। 
অর্থাৎ দান লিখিত আকারে হতে হবে তা রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হয়। তবে নাবালক সন্তান থাকলে দানের ক্ষেত্রে সন্তান সাবালক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে।

আর উইল হচ্ছে নিজের অবর্তমানে কাউকে সম্পত্তি দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। 

উইলদাতা: যিনি উইল করেন তাকে উইল দাতা 
উইল গ্রহীতা: যার বরাবরে উইল করা হয় তাকে উইল গ্রহিতা বলা হয়ে থাকে। 

দাতার মৃত্যুর পর উইল কার্যকর হয়। 
যিনি সম্পত্তি উইল করেছেন তিনি জীবিতাবস্থায় একের অধিক উইল করে থাকলে যে উইলটি সর্বশেষ করা হয়েছে তা কার্যকর হবে।
উইলকারী জীবিতাবস্থায় তাঁর সম্পত্তি দান, বিক্রয়সহ সব ধরনের হস্তান্তরের ক্ষমতার অধিকারী। 
তবে কোনো মুসলমান তাঁর দাফন-কাফনের ব্যয় ও দেনা পরিশোধের পর সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করতে পারবে না। অর্থাৎ 
ক্ষেত্রে পুরো সম্পত্তি দিয়ে যেতে পারবেন না। 
যদি এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা হয়, তাহলে সে উইল কার্যকর করা যাবে না। কারণ উইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – উত্তরাধিকারী যেন বঞ্চিত না হয়। উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে কোন উইল করা যাবেনা।

সায়াদ ইবনে আক্কাস বলেন যে, 
শেষ হজ্জের বছরে রাসুলুল্লাহ (সা) আমাকে অনেক বার মক্কাতে দেখতে এসেছেন। আমি খুব অসুস্থ ছিলাম, সেই কারণে তিনি এসেছিলেন। আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বললাম, আমার ১টি কন্যা সন্তান আছে, আর কেউ নেই। আমার সম্পত্তি প্রচুর। আমার কেউ নেই। আমার অসুখও বেড়ে যাচ্ছে। আমি কি আমার সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ দাতব্য কাজের জন্য উইল করে যাব?

জবাব:
রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, না। আমি বললাম, অর্ধেক? রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, না। তারপর বললেন, তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে যাও। যতটুকুই দাও না কেন তার জন্য আল্লাহ তোমাকে পুরস্কার দিবেন। আর তোমার ওয়ারিশদের ভিখারী করে রেখে যেও না, সেটা ভালো নয়। (মিশকাত)
কাজেই উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি পরিস্কার যে ইসলামী আইনের বিধান মোতাবেক এক তৃতীয়াংশের বেশী উইল করা যায় না। 
তবে অন্য ওয়ারিশদের অনুমতি নিয়ে এর বেশিও উইল করা যাবে। 

একজন হিন্দু ব্যক্তিও তাঁর সম্পত্তি উইল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। একজন হিন্দু ব্যক্তি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি উইল করতে পারেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জেলা জজ আদালত থেকে উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল প্রবেট করতে হয়। 

প্রবেটঃ প্রবেট হচ্ছে আদালতের মাধ্যমে উইলের প্রমাণ। কোনো ব্যক্তি উইলমূলে কোনো সম্পত্তি পেলে দাতার মৃত্যুর পর আপনা-আপনি কার্যকর হয় না। যার অনুকূলে উইল সম্পাদন করা হয়েছে তিনি ওই উইল দাখিল করে আদালতে দরখাস্ত দ্বারা স্বতসিদ্ধ (প্রবেট) করে নেবেন।

উইলমূলে স্বতসিদ্ধ করার বা প্রবেটের দরখাস্ত দাখিল করে প্রবেট বিজ্ঞাপনী (Notice) যথাযথ নিয়মে জারি করাতে হয়। এ জন্য প্রথমে দরখাস্ত প্রতিজ্ঞাপত্র (Affidavit) সম্পাদন করে আদালতে দাখিল করতে হয়। উইলকারী একের অধিক ব্যক্তির অনুকূলে সম্পত্তি উইল করে থাকলে প্রবেট নেওয়ার সময় যার ওপর সম্পত্তি পরিচালনার ভার অর্পিত হবে তিনি পরিচালক (Administrator) নিযুক্ত হবেন। প্রকৃত উইল নিবন্ধনের (Registration) পর প্রবেটসহ আদালত থেকে দরখাস্তকারী পাবে। আদালত থেকে উইলের নকল নেওয়ার প্রয়োজন হলে স্বার্থবান ব্যক্তিকে প্রথমে প্রতিজ্ঞাপত্র (Affidavit) যুক্ত দরখাস্ত দ্বারা আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করতে হবে। অনুমতি পেলে অতঃপর আদালতে নকলের জন্য দরখাস্ত করবেন। উইলের প্রবেট (উইল বলে স্বতসিদ্ধির আদেশনামা) নিতে আদালত মাশুল (কোর্ট ফি) দিতে হবে। এই কোর্ট ফি সম্পত্তির মূল্যানুপাতে (Ad valorem) নির্ধারিত নিয়মে প্রদান করতে হবে।

আরো পড়ুন:

নোট: ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না

লেখক: Maruf Hossen Jewel
All Social Page: 

আমার সাইটঃ MHJ & Associates
নোট: আমাদের ফেসবুক Lawyer's Club Rajshahi পেজ এ লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top